শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭

কতখানি বন্ধু হব




ছেলে ও মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় কিনা সেই তর্ক অনেক পুরানো। অনেকে ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয়না, প্রেম হয় বলে বিশ্বাস করেন আবার অনেকে যারা এরকম মনে করেন তাদেরকে খ্যাতমনে করেন। এই দুটো অবস্থান থেকেই আমি একটু নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চাই। বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি তবে তা খুব ঘনিষ্ঠ বা নির্ভরশীল বন্ধুত্বে নয়, মাত্রার ভিতরে। এখনকার যুগ হচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের যুগ। এখন নাকি প্রতি ঘরে ঘরে বন্ধুর প্রয়োজন হয়! এতো বন্ধু মেইনটেইন করে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে কিভাবে তা আমার মনে প্রশ্ন তোলে কিন্তু সে আলোচনায় আজকে না যাই। আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই তা হলো এই যে এতো বন্ধুদের সাথে আসলে কতখানি বন্ধুত্ব করব, বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে!!
ফেসবুক, স্কাইপ, ওয়াটস অ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ইত্যাদি বহুবিধ ভার্চুয়াল সামাজিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। সেখানে আমাদের বিভিন্ন ক্যাটগরির বন্ধু থাকে। বাচ্চা কালের বন্ধু, স্কুল-কলেজের বন্ধু, কর্মক্ষেত্রের কলিগ (তারাও বন্ধু), আমাদের টিচাররাও আমাদের বন্ধু হবার সুযোগ দিয়ে থাকেন, এছাড়াও এই বিশাল বন্ধু লিস্টের অনেকেই পরিচিত, অল্প পরিচিত, কেউ বা আবার পরিচিতদের পরিচিত আবার কেউ বা যেকোন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলেই একসেপ্ট করেন।  ফ্রেন্ড লিস্টে ফ্রেন্ডদের সংখ্যা একটা প্রেস্টিজের বিষয়!
ভার্চুয়াল জগতের এই বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা হয়  চ্যাটকরার মাধ্যমে। আমি লেখা শুরু করেছিলাম ছেলে মেয়েদের বন্ধুত্ব নিয়ে। অনেকেই নতুন বন্ধুত্ব তৈরী করার জন্য বেছে নেন এই সামাজিক মাধ্যমগুলোকে। অনেকে আবার পুরানো সম্পর্ককে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করেন। ইদানিং যে খবরগুলো আমাকে আতংকিত করে তা হলো প্রেমের ফাঁদে পড়ে মেয়েদের সর্বনাশ- ভিডিও সহ। হরেক রকম অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইটগুলোতে এগুলোই এখন রমরমা খবর।
কিন্তু আমার আজকের লেখা সাইকোপ্যাথদের নিয়ে নয়। যারা পরিকল্পিতভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে ফায়দা নেয়। আমার আজকের লেখা তাদের জন্য যাদের কাছে পরিবার, বন্ধুত্বের মূল্যায়ন আছে, জীবনে কিছু করার বা কিছু হওয়ার স্বপ্ন আছে, সামাজিক, পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার ইচ্ছে আছে। যারা এরকম স্বপ্ন দেখেন সময়টা তাদের খুব একটা অনুকূলে নয়। কারণ এখন সময়টা যারা হুজুগে তাদের জন্য। এখন সবাই মন যা চায় সেই দিকেই ঝুঁকে পড়ে। কারো ফেসবুকে সময় কাটাতে ভালো লাগলে সারাদিন ফেসবুকেই কাটিয়ে দিচ্ছে, কারো মোবাইল ফোনে কথা বলতে ভালো লাগলে সারা রাত কথা বলেই কাটিয়ে দিচ্ছে, কারো আড্ডা দিতে ভালো লাগলে তার বাসায় ফেরার আর নাম নেই। এর সবকিছুই কিন্তু বন্ধুদের ঘিরে। আর কয়জন ছেলে বা মেয়ে যারা ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় কাটায় বা মোবাইলে কথা বলে সমলিঙ্গের বন্ধুদের সাথে! তবে এখন যেহেতু সহজে কেউ রোমান্টিক সম্পর্কে জড়াতে চায় না তাই সবাই এখন বন্ধু। কেউ কেউ হয়তো বন্ধুত্বের সীমাতে ধরে রাখতে পারে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যখন কারো সাথে নিয়মিত কথা বলা বা চ্যাট করা হয় তখন একপক্ষ বন্ধুত্ব বা পরিচিতদের গন্ডি থেকে বের হয়ে আবেগীয়ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখনই শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি। অপরপক্ষ থেকে একই রকম সাড়া না পেলে তখন নিজেকে প্রতারিত মনে করে আর অপরপক্ষকে মনে করে প্রতারক। অথচ হয়তো এই সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিলো ফেসবুকে অলস সময় কাটানো ‘হাই, হ্যালো, কি করছেন?, কি নিয়ে ব্যস্ত দিয়ে’তাই আমার আজকের এই লেখা যে আসলে কতখানি বন্ধু হবো। 
এখনকার প্রতিযোগীতামূলক জীবনে সবাই এতো এতো সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্কের ভেতরে থেকেও যেন অনিরাপত্তায় ভোগে। ভেতরে ভেতরে এতটাই একা, বন্ধুহীন, ভালোবাসার অভাব যেন তাড়া করে ফেরে। অনেক সময়ই দেখেছি যখন অনেকে খুব বেশী আবেগপ্রবণ থাকে হয়তো বাবা মায়ের ঝগড়া, স্বামী স্ত্রীতে দ্বন্দ্ব বা আগের সম্পর্কে ব্রেক আপ বিভিন্ন কারণে তখন তারা সম্পর্কে বেশী জড়িয়ে পড়ে। অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে তারা ওই সমস্যাগুলো ভুলে থাকতে চায় বা তা থেক মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু এই খাপছাড়া সম্পর্কগুলো জীবনে আরো বেশী জটিলতা তৈরী করে। মানুষকে আরো বেশী বিপর্যস্ত করে।
অনেক সময়ই শুনি “আমি তো শুধু বন্ধু ভেবেছিলাম, কিন্তু ও যে দুর্বল হয়ে পড়বে বুঝতে পারিনি। আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি, এরকম কেন হলো জানিনা”। এই কথাগুলো তাদের মুখ থেকেই শোনা যায় যারা সম্পর্ককে মূল্যায়ন করেন। দেখা গেল বিয়ের পরেও হাসব্যান্ড ব্যাস্ত, আশানুরূপ সময় দিতে পারছেন না, হয়তো কোন ক্লাসমেট যার সাথে আগে কিছুই ছিলো না, টুকটাক কথা বলে সময় কাটাতে গিয়ে নির্ভরশীল হয়ে পড়লেন। কিন্তু সেই ভদ্রমহিলার হয়তো স্বামীকে ঠকানোর কোন উদ্দেশ্যই ছিল না। অনাকাংখিত পরস্থিতির শিকার।
আবার আমরা অনেকেই যখন কথা বলি এমনভাবে কথা বলি যেন অন্যদের মনে কিছু একটা আশার সঞ্চার হয় যে, সম্ভাবনা আছে। মানুষ হিসাবে আমরা সবাই চাই যা সবাই আমাদের পছন্দ করুক। অন্যদেরকে তাক লাগানো, অন্যদের মনে জায়গা করে নেওয়ার ইচ্ছা আমাদের সবসময়ই করে। কথার চমকে মানুষকে মুগ্ধ করার চেষ্টাকে আমরা খুব বেশী অন্যায় বলে মনে করিনা। কারণ আমরা শুধু শারীরিকভাবে অনুপ্রবেশকেই অপরাধ বলে মনে করি। কারো মনে অন্যায়ভাবে আশার সঞ্চার করাও অনুচিত তা খেয়াল করিনা। যেমন অনেক সময় ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা তাদের ম্যারিটাল স্ট্যাটাস লুকিয়ে এমনভাবে কারো সাথে আলাপ পরিচয় গড়ে তোলেন যে অপর পক্ষের মনে হয় সম্ভাবনা আছে।  
ফেসবুকে মেসেজের সূত্র ধরে স্বামী স্ত্রীতে দ্বন্দ্ব এখন অতি সাধারণ ঘটনা। প্রায়শই তা ডিভোর্স পর্যন্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। স্ত্রীদের মতে ছেলেরা ঘরের বাইরে গেলেই বউ আছে যে ভুলে যায়। স্বামীরা বলে কিছু না করলেও বউরা সন্দেহ করে, ভালো থেকে লাভ কি। উভয়পক্ষকে বলছি প্রথম দেখায় প্রেম হলেও হতে পারে কিন্তু আস্থা তৈরী হয়না। আস্থা তৈরী প্রতিদিনকার চলনে-বলনে, আচার-আচরণে। আপনার সঙ্গীর মনে আস্থা আপনাকেই তৈরী করতে হবে। পারিবারিক সম্পর্কের স্থিরতা মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পারিবারিক সম্পর্কগুলোতে যদি আপনি সুখী থাকেন তাহলে সামাজিক ভাবে, কর্মক্ষত্রে আপনার জয় সুনিশ্চিত। বেশীরভাগ মানসিক সমস্যা, মাদকাসক্তির সমস্যার ক্ষেত্রেই দেখা যায় পারিবারিক জীবনে অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব, অসুখী থাকা মূল কারণ হিসাবে কাজ করে।
এই সময়ে আমার কথাটা হয়তো অদ্ভুতই শোনাবে, জীবনটাকে সহজ করতে গেলে আপনার অনেক অনেক বন্ধুর দরকার নেই, কিছু ঘনিষ্ঠ, সৎ বন্ধুর প্রয়োজন। অনেক অনেক বন্ধু থাকা, অনেক অনেক মেয়ে বন্ধু থাকা, অনেক অনেক শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো ‘COOL’ নয়। সম্পর্ককে মূল্যায়ন করা, একটি সম্পর্কের প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটাই ‘COOL’. কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা, একাধিক সম্পর্কের ভাঙ্গন, একাধক শারীরিক সম্পর্কে জড়া নো মানসিক সমস্যার লক্ষণ!!!
পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে খুব বেশী কিছু নয় এটুকু খেয়াল রাখলেই হবে তা যেন আপনার অন্য কোন সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, আপনার জীবনসঙ্গীর মনে ইনসিকিউরিটি তৈরী না করে। সেই বন্ধুত্ব যেন কোন এক পক্ষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

শিশুর বেড়ে উঠায় পরিবারের ভূমিকা



আমার বাবুর বয়স বছর মাস। সে মোবাইল দেখলেই অনেক উত্তেজিত হয়ে যায়। আমি চাইনা সে খুব বেশি মোবাইলের সংস্পর্শে  আসুক। কারণ মোবাইল স্ক্রীনের আলো যেহেতু বাচ্চাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এই বিষয়টা পরিবারের অন্য কেউ গুরুত্তের সাথে নিচ্ছেনা। সবাই সব কিছুর সমাধান হিসাবে তার হাতে মোবাইল দিয়ে দেয়। যেমন সে কান্না করলে তাকে থামানোর জন্য, খেলার জন্য, বা কখনো ছবি দেখানোর জন্য। এছাড়াও যারা দূরে থাকেন তারা ভিডিও কল করে দেখে দেখে কথা বলতে চান। তারা সবাই নিজের পরিবারেরই মানুষ। তাই না করাটা কঠিন। আর এখনকার সময়ে যেহেতু মোবাইল ছাড়া কারো একমুহূর্ত চলেনা, সবাই কারণে-অকারণে মোবাইলে মাথা গুঁজে থাকে, বাবুর জন্যও মোবাইলটা খুব কৌতুহলের জিনিস হয়ে উঠেছে। এখন তার হাতে মোবাইল না দিলে সে কাঁদে। কিন্তু আমি চাই মোবাইলের ব্যবহার বেবির জন্য সীমিত হোক। এই বিষয়টা সবাইকে বোঝাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সময় আমার আড়ালে বাবুর হাতে মোবাইল দিয়ে দিচ্ছেন যা আমাকে আরো বেশি কষ্ট দেয়। কারণ আমি মনে করি এতে করে বাচ্চাটি আমার কাছে আড়াল করতে শিখবে এবং দূরত্ব তৈরি হবে।  আমি এখন কি করব??? “

একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর পরিবারের অনেক কিছুই বদলে যায়। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। নতুন মায়ের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কেও এক নতুন সেতুবন্ধন তৈরী হয়। যারা প্রথমবার মা বাবা হন তাদের অনেকেই শিশুকে সঠিকভাবে লালন পালন করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। সেরকম একজন মায়ের কথাই উপরে তুলে ধরা হয়েছে। শিশুকে পরিবারের নিয়ম কানুনগুলো শেখানো, কাংখিত আচরণগুলো গড়ে তোলা, অনাকাংখিত আচরণ যেমন মিথ্যা বলা কিভাবে দূর করা যায় ইত্যাদি অনেক বিষয় নিয়েই বাবা মায়ের অনেক প্রশ্ন থাকে। আমাদের দেশে বাচ্চাকে মানুষ করার ক্ষেত্রে যেহেতু মায়েরাই বেশি সময় দেন তাই উদ্বেগটাও মা্যেদেরই বেশি। আবার বাচ্চাদের কোন ভুল আচরণের জন্য মায়েদেরকেই দোষারোপ করা হয় বেশি যা একদমই সঠিক নয়। একটি শিশু পৃথিবীতে আসার পর তার সবকিছু শেখাই হয় পরিবার থেকে। শিশুর ভালো আচরণ, মন্দ আচরণ সব আচরণের পেছনেই পরিবারের ভূমিকা অসীম। শিশুরা সবকিছুই খুব তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করে। যেমন উপরের গল্পের মায়ের আশংকাটি সঠিক। বাচ্চাটি যখনই বুঝতে পারবে তার মা শুধু মোবাইল অ্যালাউ করছে না পরিবারের অন্যেরা করছে তখন সেও মায়ের আড়ালে মোবাইল নিয়ে খেলবে এবং হয়তো মায়ের কাছে তা লুকাতে শিখবে। পরবর্তিতে তা অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও হতে পারে। মা যা পছন্দ করে না তা মায়ের আড়ালে করা এবং মায়ের কাছে লুকানো যা হয়তো ছোট ছোট মিথ্যার সূত্রপাত করতে পারে। কারণেই শিশুদের কোন কিছু শেখাতে চাইলে সে বিষয়ে পরিবারের সকলের একই দৃষ্টিভংগী থাকা  এবং সকলেরই সেই কাংখিত আচরণ শিখতে সহায়তা করা দরকার। ভিন্নমত থাকলেও বড়রা তা আলোচনা করে সকলে একমত হতে সেরকম একটি জায়গায় পৌছে সেই লক্ষ্যটিই বাচ্চার জন্য নির্ধারণ করতে হয়
এই বিষয়টাই সবচেয়ে কঠিন। এমনকি প্রফেশনালদের জন্যও। একজন প্রফেশনাল যখন প্রাপ্ত বয়স্ক ক্লায়েন্ট দেখেন তখন তার জন্য কাজটা তুলনামূলকভাবে সহজ কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তিটি নিজের সমস্যাটি বুঝতে পারেন এবং তা নিজেই সমাধানের দায়িত্ব নিতে পারেন (বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ) কিন্তু বাচ্চাদের আচরণগত সমস্যা সমাধানের জন্য যখন বাবা মা বাচ্চাকে নিয়ে আসেন তখন মূলত বাবা মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়েই কাজ করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের আচরণগত সমস্যার জন্য পারিবারিক নিয়ম শৃংখলার অভাব, বাবা-মায়ের পর্যাপ্ত সময় না দেয়া, বাবা-মার নিজেদের দাম্পত্য কলহের প্রভাব, শিশুদের যা করতে বলা তা নিজেরা মেনে না চলা, কাংখিত আচরণকে পুরস্কৃত না করে অনাকাংখিত আচরণগুলোর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় দায়ী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বড়রা যদি তাদের আচরণে পরিবর্তন আনেন শিশুর সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হয়ে যায়। শিশুদেরকে যে পরিবেশ দেয়া হয় তারা সেভাবেই বেড়ে ওঠে।
তাই শিশুদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে বাবা মা সহ পরিবারের সকল সদস্যদের যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে তা হলোঃ
           শিশু কি করতে পারবে বা কি করতে পারবে না, কি চাইলে পাবে বা কি চাইলে পাবে না তার জন্য একটা লিমিট সেট করা। অনেক বাবা মা মনে করেন শিশু যা চায় তা দিয়ে দেয়াটাই বুঝি আদর। কিন্তু আসলে তা নয়। শিশুর বয়স বুঝে তার কোন আবদারগুলো পূরণ করা উচিত তা পরিবারের সবাই মিলেই ঠিক করতে হবে। যেন বাবা মা একজন নিষেধ করলেন কিন্তু অন্যজন দিয়ে দিলেন এমন না হয়।
           শাসন বা পারিবারিক নিয়মনীতিগুলো যেন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়। একই আচরণের জন্য একদিন কিছুই না বলা বা আরেকদিন কঠিন শাস্তি দেয়া বাচ্চাদের কাছে ভুল মেসেজ পৌছায়। তারা অনাকাংখিত আচরণের সাথে শাস্তির সম্পর্কটা বুঝতে পারে না, তারা মনে বাবা মা তাদের মেজাজ মর্জির উপর নির্ভর করে শিশুদেরকে শাস্তি দেন।
           শিশুদেরকে যে আচরণ নিষেধ করা হয় তা নিজেরাও না করা। যেমনঃ বাচ্চাকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করে যদি বাবা মাই বাচ্চার সামনে মিথ্যা বলেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চার ভেতরে কাংখিত আচরণ গড়ে তোলা যাবেনা। বাবা মা যা বলেন তার চেয়ে তারা যা করেন তাই শিশুকে শেখায় সবচেয়ে বেশি।
একটা কেস স্টাডি দিয়ে শুরু করেছিলাম যেখানে একজন মা তার বাচ্চার জন্য মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করতে চাচ্ছেন কিন্তু পরিবারের অন্যান্যদের ততটা সহযোগীতা পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইরকম দৃশ্যই দেখা যায়। কিন্তু আমরা যখন লক্ষ্য স্থির করব শিশুদের জন্য পরিবারে একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করব তখন বাবা মা সহ পরিবারের আমাদের সকলেরই কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হবে। আমরা নিজেরা যদি আদর্শ  না হই তাহলে আদর্শ সন্তান কিভাবে গড়ে তুলব।