বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আমার হার্ট অনেক দুর্বল!!!



"আমার হার্ট অনেক দুর্বল। মাঝে মধ্যেই আমার হার্টবিট অনেক বেড়ে যায়। মানে বুকে ধড়ফড় শুরু হয় আরকি। মনে হয় নিজের উপর আর কোন নিয়ন্ত্রণ নাই, মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। সারা শরীর কাঁপতে থাকে। প্রচুর ঘাম হয়। বুকের ভেতর কেমন যেন লাগে। দম বন্ধ হয়ে যায়, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মনে হয় এখনি মরে যাবো। হার্টের অনেক ভালো ভালো ডাক্তার দেখিয়েছি। কেউ কিছু ধরতে পারে নাই। মানসিক রোগের এখানে কেন যে পাঠালো আমি তো বুঝতে পারছিনা। আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি?"

আপনি যদি এই ধরনের লক্ষণ নিয়ে সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে রেফার হয়ে আসেন তাহলে আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক। শুধু আপনিই নন এই সমস্যার বেশীরভাগ ক্লায়েন্টই কার্ডিয়াক ডিপার্টমেন্ট থেকে, অনেকেই এই প্রচুর টেস্ট করান, এক ডাক্তার থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে ঘুরে বেড়ান। কারণ হার্টবিট এতো তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়াকে অনেকেই ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বলে মনে করেন। ডাক্তার যখন বলেন, " আপনার হার্ট সুস্থ আছে, কিছু হয়নি, তখন ক্লায়েন্ট মনে করেন ডাক্তার তার রোগ ধরতে পারেনি। আসলে আপনি যে লক্ষণগুলোকে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বলে ভাবছেন তা প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ। আর প্যানিক অ্যাটাক যদি অপ্রত্যাশিতভাবে হয় কোনরকম কারণ ছাড়াই এবং ব্যাক্তির ভিতরে যদি অতিরিক্ত ভয় তৈরি হয় আবার এই রকম অ্যাটাকের মুখোমুখি হবার, যার ফলে ব্যাক্তির স্বাভাবিক জীবনযাপন হুমকীর সম্মুখীন হয় তাকে প্যানিক ডিসঅর্ডার বলে। প্যানিক ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ। সে কারণেই আপনাকে সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে রেফার করা হয়েছে। আর সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে আসা মানেই পাগল হয়ে যাওয়া নয়। মন ও মস্তিস্কের অধিকারী হলে মানসিক বিভাগে কখনো কখনো ঢুঁ মারাটা স্বাভাবিক।

কি? নিজেকে বোকার মতো মনে হচ্ছে? ভুল কিন্তু আপনার নয়। অনেক সময় ডাক্তারদেরও সময় লাগে লক্ষণগুলো শারীরিক না মানসিক বোঝার জন্য। সুতরাং আপনি বিভ্রান্ত হতেই পারেন। কিন্তু লক্ষণগুলো যে মানসিক হতে পারে যখন আপনি স্বীকার করে নেবেন তখনই আপনার সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যাবে।

 প্যানিক ডিসঅর্ডারে অনেক সময়ে ব্যাক্তি প্যানিক অ্যাটাকের ভয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া কমিয়ে দেয় বা মানুষজনের ভীড় এড়িয়ে চলে, একে বলা হয় প্যানিক ডিসঅর্ডার উইথ অ্যাগোরাফোবিয়া। এই মানসিক রোগটি সাইকোথেরাপীতে অনেক ভালো কাজ করে। প্যানিক ডিসঅর্ডারে প্রফেশনাল হেল্প পাওয়ার সুযোগ না থাকলে আমরা নিজেরা নিজেরা কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারি তা আগামী লেখায় পড়বো!



মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আজকে একবার খাই, কাল থেকে আর খাবনা!!!

কৌতুহল থেকে নেশার জগতে জড়িয়ে পড়ার পর এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সবাই যে বুঝতে পারেনা তা কিন্তু নয়। অনেকেই বোঝেন, মনে মনে ঠিক করেন আর করবেন না, তারপরও দেখা যায় আবার করছেন। কিভাবে এই দুষ্ট চক্র চলতে থাকে? মাদক গ্রহণের এই আচরণটি সম্পর্কে প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু বিশ্বাস থাকে। যেমনঃ অনেকে মনে করেন গাঁজা তেমন ক্ষতিকর নেশাদ্রব্য নয় বা মাঝে মাঝে করলে আসলে তেমন কিছু হয় না। যারা দীর্ঘদিনের মাদকসেবী তাদের জন্য একেবারেই কিছু নেবনা এমন চিন্তা করাটা অসম্ভব মনে হয়। অনেকে হয়তো ভেবে রাখেন যে দিনে এক স্টিক গাঁজা খাবেন বা শুধু অ্যালকোহল নিবেন। অনেকে শুধু উৎসবের দিনগুলোতে করার ইচ্ছা মনে মনে পুষে রাখেন। যার ফলে নেশার সাথে তাদের মানসিক বন্ধনটা ছিন্ন হয় না। ফলে যখন কোন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরী হয় তখন তা মোকাবেলা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমনঃ চাঁদ রাত, ঈদের দিন, পহেলা বৈশাখ বা বন্ধুদের সাথে যে কোন কিছু সেলিব্রেট করার জন্য আমন্ত্রণ পান তখন দৃঢ়ভাবে না করা সম্ভব হয় না। আর নিজেরো যেহেতু ধারণা একদিন খেলে কিছু হয়না তাই নিজেকে ছেড়ে দেন "আজকে খাই, কাল থেকে আর খাব না"। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণটা ধরে রাখা সম্ভব হয় না। দেখা যায় পরদিন আবার খেতে ইচ্ছা করলো হুট করে মনে হলো আজকেই একবার খাই আর খাব না। আর উৎসবেরও এখন কোন অভাব নাই। আজকে অমুক তো কালকে আবার অমুক দিন। ফলে এভাবেই দুষ্ট চক্র চলতে থাকে আর ব্যাক্তি ধীরে ধীরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

অ্যালকোহল নির্ভরশীলদের জন্য যেমন রয়েছে অ্যালকোহল অ্যানোনিমাস বা AA নামে সেলফ হেল্প গ্রুপ তেমনি মাদকে নির্ভরশীল ব্যাক্তিদের জন্যও আছে নারকোটিক অ্যানোনিমাস বা NA গ্রুপ। এই গ্রুপগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য স্লোগান হলো "আজকের দিনের জন্য বেঁচে থাকো" (One day at a time). এই স্লোগান কাজে লাগিয়ে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে মাদকমুক্ত আছেন।

আজকে খাই কালকে থেকে আর খাবনা - এই চিন্তা থেকে সরে এসে যদি আজকের দিনের জন্য ড্রাগস ফ্রি থাকবো এভাবে চিন্তা করতে শিখি তাহলে এই দুষ্ট চক্র ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসা কিছুটা হলেও সহজ হবে।

রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

কৌতুহল ও মাদক নির্ভরশীলতা

মানুষ মাত্রই কৌতুহলী। মানুষ মাত্রই নতুন কিছু জানতে চায়, বুঝতে চায়, পরীক্ষা করে দেখতে চায়। মানব সভ্যতা বিকাশে কৌতুহলের ভুমিকা অপরিসীম। কিন্তু এই কৌতুহলই আবার কখনো কখনো বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায়। যখন তা মাদকের প্রতি দেখানো হয়। অধিকাংশ মাদক নির্ভরশীল ব্যাক্তি কৌতুহলী হয়েই এই পথে পা বাড়ান। উঠতি বয়সে সিগারেট দিয়ে শুরু করে তারপর কিছুদিন পরে গাঁজার প্রথম টান। বন্ধুদের কাছে শোনা গল্প বা খাওয়ার  পর কেমন লাগে তা জানার জন্যই কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে টান দেয়া হয়। অ্যামেরিকান একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় শতকরা ৫ থেকে ১৯ ভাগ অনুর্দ্ধ ১৯ বছরের কিশোরেরা গুরুতর মাদকাসক্তির সমস্যায় আক্রান্ত হয় যার প্রথাগত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশও পরিস্থিতি আশংকাজনকভাবে অবনতি ঘটছে। স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত জরীপ অনুযায়ী সারাদেশে মাদকাসক্তের হার প্রায় ৪৬ লাখ, কোন কোন সূত্র অনুযায়ী তা ৭০ লাখের বেশী। এর মধ্যে ৯১ শতাংশই কিশোর ও যুবক। কিশোর বয়সে কৌতুহল থাকে বেশী এবং প্রলোভন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকে কম। ফলে বন্ধুদের দ্বারা বা বন্ধুদের কাছ থেকে শোনা তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় সহজেই। অধিকাংশ মাদকসেবী বিষ্যটি যেভাবে উপস্থাপন করেন তা হলো "মনে হইলো একটু খেয়ে দেখি কেমন লাগে, অনেক তো শুনছি"। ১৭ বছর বয়সী একজন ক্লায়েন্ট বলেছিলেন " আমার জীবনের একটা ফান্ডা হইলো সবকিছু ট্রাই করমু, যতরকম নেশা আছে সব একবার খেয়ে দেখমু"। সবগুলো দেখতে হয়নি ইয়াবাতে এসেই জড়িয়ে পড়লেন এবং সেই সময় একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তি ছিলেন। জীবন সম্পর্কে অতিরিক্ত অ্যাডভেঞ্চার ও কৌতুহলী মনোভাব তাকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছিলো।  'ও' লেভেল পরীক্ষার্থী ছিলেন সে বছর মিস করলেন। প্রথমে কৌতুহল থেকে নেওয়া হয়েছে, তা থেকে উদ্ভূত সমস্যার ফলে পরে হতাশা থেকে নেওয়া হয়। এভাবে ব্যাক্তি মাদকের নির্ভরশীলতার জালে জড়িয়ে যায়। সুতরাং আমরা যেন আমাদের জন্য ক্ষতিকর এমন কৌতুহল থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি এবং এ বিষয়ে বন্ধুদের মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে পারি। মাদকগ্রহণ সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে বন্ধুদের চাপ যেন অগ্রাহ্য করতে পারি।

শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

সামাজিক উদ্বেগে করণীয়

সামাজিক উদ্বেগে ব্যাক্তি সামাজিক পরিসস্থিতির প্রতি অতিরিক্ত উদ্বেগ প্রকাশ করে যে কারণে সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু দেখা যায় এই এড়িয়ে যাওার প্রবণতাই ব্যাক্তির সমস্যাগুলোকে আরো বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং সামাজিক পরিস্থিতির প্রতি এই ভয়কে জয় করতে হলে এই জাতীয় পরিস্থিতিগুলোর বেশী বেশী করে মুখোমুখি হতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যে নেতিবাচক চিন্তাগুলো আসে সেগুলো ভিন্নভাবে দেখতে শিখতে হবে। যেমনঃ
                              "আমার কথা মনে হয় বোকার মতো শুনাবে"
এক্ষেত্রে এই ভাবনার কি প্রমাণ আছে তা খুঁজে দেখতে পারেন। যদি হয়ও তাহলে সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে? মতামত প্রকাশ করলে সবচেয়ে ভালোই বা কি হতে পারে? বোকার মতো বলতে আপনি কি ভাবছেন? কেন তা এত ভয়ঙ্কর? এর ভেতরে বাস্তবতা কতটুকু? প্রশ্নগুলো চিন্তা করে একটা যুক্তিসংগত ভাবনা খুঁজে বের করুন। যেমন
                               "বলার পরই আমি বুঝতে পারব সবাই কি ভাবছে"
          বা "সব সময় সঠিক কথাই বলতে হবে বিষয়টি তা নয়, কথা বলে বলেই আমি সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারব"
এইভাবে নিজের নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করলে ভয়কে অনেক খানিই কাটিয়ে উঠা যায়।
সামাজিক উদ্বেগে একক সাইকোথেরাপি যেমন ভালো কাজ করে তেমনি গ্রুপে সামাজিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ নতুন দক্ষতাগুলোকে প্রয়োগ করতে খুব ভালো কাজ করে। কারণ শুধু নেতিবাচক চিন্তাই নয় অনেক কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের আচরণ করতে হবে তা জানা না থাকলেও ব্যাক্তির সামাজিক সম্পর্ক ব্যাহত হতে পারে।

সামাজিক উদ্বেগ

                                               " আমাকে কেউ পছন্দ করেনা। আমার সাথে মিশতে চায়না।                                                         আমিও কারো সাথে সহজে মিশতে পারিনা। কথা বলতে গেলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। 
চোখে পানি চলে আসে। বন্ধুদের আড্ডায় বসলেও দেখা যায় আমি চুপ করেই থাকি। 
      আমার written exam ভালো হয়  কিন্তু প্রেজেন্টেশনে কম নম্বর পাই বলে পিছিয়ে যাচ্ছি। 
কি করব কিছু বুঝতে পারছি না !!!!"""

আমাদের সবার হয়তো সবার সাথে মেশার দক্ষতা সমান থাকেনা। কেউ কেউ হয়তো সহজেই বন্ধুত্ব করতে পারি, কারো কারো হয়তো একটু সময় লাগে আবার কেউ কেউ পারিনা বলে মনঃকষ্টে ভুগি। যখন কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বা কারো সাথে মিশতে গেলে কেউ অতিরিক্ত উদ্বেগে ভুগে, একে সামাজিক উদ্বেগ বলে। সামাজিক উদ্বেগ একটি মানসিক সমস্যা। ব্যাক্তি অনেক সময়ই উপরের বাক্যগুলোর মাধ্যমে সমস্যা প্রকাশ করে। অনেক সময় কোন সমাধান নাই মনে করে মনের কষ্ট চেপে রাখেন অথচ সাইকোথেরাপীর মাধ্যমে ভালো চিকিৎসা করা যায়। মানসিক চিকিৎসার প্রতি স্টিগমার কারণে অনেকেই এগিয়ে আসেন না। অথচ সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি ব্যাক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের যেমন উন্নতি ঘটায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং কর্মক্ষেত্রে সফল করে তোলে।

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

মানসিক চাপ

প্রতিদিন অনেক অনেক কাজের চাপে আমাদের মনে ক্লান্তি জমে যায়. ছোট ছোট ক্লান্তিকর বিষয়গুলো জীবনকে একঘেয়ে করে তোলে. সেকারণে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের মনের যত্ন নেওয়্টাও অত্যন্ত জরুরী. প্রতিদিন নিজের মানসিক চাপ কমনোর জন্য নিয়মিত কিছু করা বার্ন আউটের (burn out) সম্ভবনা কমিয়ে দেয়. ফলে ব্যক্তি কার্যক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে. চাকুরীজীবী, গৃহিণী, ছাত্র-ছাত্রী যে কেউ হোক না কেন প্রতিদিন যদি কাজের মাঝে কিছুটা সময় নিজের জন্য সচেতনভাবে ব্যয় করা হয় তা অনেকখানি মানসিক তৃপ্তি দেয়. ভালোলাগার বিষয়গুলো প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তবে breathing relaxation মানসিক চাপ কমানোর একটি কার্যকরী পদ্ধতি.