মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

ভালোবাসার তত্ত্বকথা


              

সম্প্রতি একটা বই পড়লাম ‘The Psychology of Love’. বইটিতে ভালোবাসার থিওরী ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা থিওরী বেশ আকর্ষণীয় লাগলো। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্যই লেখার উদ্যোগ নিলাম। স্টার্ণবার্গ তার ভালোবাসার ত্রিভুজ তত্ত্বে ভালোবাসার তিনটি উপাদানের কথা বলেছেন। ঘনিষ্ঠতা, প্যাশন এবং সিদ্ধান্ত/কমিটমেন্ট- এর সমন্বয়েই নাকি তৈরী হয় ভালোবাসা। তবে প্রতিটি উপাদানেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন ঘনিষ্ঠতা উপাদানের ভিতরে আবেগ, অনুভুতি, উষ্ণতা, ভালোবাসার বন্ধন এই বিষয়গুলো রয়েছে। প্যাশন ব্যাক্তিকে আবেগ তাড়িত করে যা কিনা রোমান্টিক অনুভূতি, শারীরিক আকর্ষন, যৌন সম্পর্ক এই বিষয় গুলোকে ধারণ করে। সিদ্ধান্ত বা কমিটমেন্ট একজন ব্যাক্তিকে ভালোবাসা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এবং ভালোবাসা ধরে রাখার মতো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে। এই তিনটি উপাদানের তারতম্যই একটা সম্পর্ক কতখানি স্ট্যাবল হবে, কতখানি নিয়ন্ত্রিত হবে বা কিভাবে মূল্যায়িত হবে তা নির্ধারণ করে। যেমনঃ কোন সম্পর্কে যদি ঘনিষ্ঠতা ও সিদ্ধান্ত/কমিটমেন্ট বেশী থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক স্থায়ী হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী, আবার শুধু প্যাশন থেকে যে সম্পর্ক তৈরী হয় তা তুলনামূলক ভাবে কম স্থায়ী হতে দেখা যায়। স্টার্ণবার্গ তার এই তিনটি উপাদানকে হেরফের করে ভালোবাসার আটটি ধরনের কথা বলেছেন।

১। যে সব সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা, প্যাশন ও সিদ্ধান্ত/ কমিটমেন্ট কোন কিছুই থাকেনা সেগুলি ভালোবাসা বিহীন (non love) সম্পর্ক। যেমন আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেকের সাথেই প্রয়োজনীয় সম্পর্ক বজায় রাখি।
২। যে সব সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বেশী কিন্তু প্যাশন বা কমিটমেন্ট কম সেই সম্পর্ক গুলো পছন্দের (liking) আওতায় পড়ে। যেমনঃ বন্ধুত্ব।
৩। প্যাশন যে সম্পর্কে বেশী থাকে কিন্তু ঘনিষ্ঠতা ও কমিটমেন্ট থাকে না সেই সম্পর্ককে মোহ (infatuation) বলে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া যদিও অনেকের কাছেই আকর্ষনীয় কিন্তু স্টার্ণবার্গ একে মোহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৪। যে সম্পর্কে শুধুমাত্র কমিটমেন্ট থাকে কিন্তু ঘনিষ্ঠতা ও প্যাশন কম থাকে তা হলো শূন্য ভালবাসা ( empty love) পারিবারিক ভাবে আয়োজিত বিয়েতে প্রাথমিক অবস্থায় এটি লক্ষ্য করা যায়।
৫। ঘনিষ্ঠতা ও প্যাশন বেশী থাকে কিন্তু কমিটমেন্ট থাকেনা তা রোমান্টিক ভালোবাসার (romantic love) বৈশিষ্ট্য।
৬। ঘনিষ্ঠতা ও কমিটমেন্ট বেশী থাকে কিন্তু প্যাশন কম থাকে তা অনেকটা সঙ্গীর মতো ভালবাসা (companionate love)
৭। ঘনিষ্ঠতা কম থাকে কিন্তু প্যাশন ও কমিটমেন্ট বেশী থাকে তা অনেকটা বোকার মত ভালবাসা (fatuous love) এটা অনেকটা ঝড়ের মতো ভালবাসা। ঘনিষ্ঠতা কম থাকায় সম্পর্কের স্থায়ীত্ব থাকেনা।
৮। যে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা, প্যাশন ও কমিটমেন্ট সবকিছুই বেশী থাকে তা হলো পরিপুর্ণ ভালবাসা (consummate love). রোমান্টিক ভালোবাসায় আসলে সবাই এইরকম একটা পরিপূর্ণতায় পৌছাতে চায়।

বেশীরভাগ সম্পর্ককেই হয়তো একটি নির্দিষ্ট ভাগে ভাগ করা যাবেনা। কারণ সম্পর্কের চড়াই উৎরাইয়ে ভালোবাসার উপাদানগুলোর তারতম্যে বিভিন্ন পর্যায় আসতেই পারে! যেমন অল্প বয়সে মোহ (infatuation) অনেক বেশী লক্ষ্য করা যা কিনা সেই চিরন্তন সত্যের মতোই মনে হয়। হুটহাট করে প্রেমে পড়া এবং ছ্যাকা খাওয়া টিন এজারদের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। যদিও বলা হয় ভালবাসা হিসাব করে হয়না কিন্তু একটা সম্পর্ক কিভাবে পরিপূর্ণ হতে পারে তার ধারণা হয়তো এই লেখা থেকে পেতে পারি। কারোন শুধু চোখের ভালো লাগাই নয়, একে অপরকে জানা, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাও একটা সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদী করতে কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই থিওরী তা বলে দিচ্ছে!               

সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

মানসিক রোগ বনাম জ্বিন ভূতের আছর



রিতা একমাস ধরে কথা বলেনা। সারাদিন বোবার মত তাকিয়ে থাকে। একেবারেই চুপ, তাও না হয় সহ্য করা যেত কিন্তু গত পনের দিন সে হাত পা কুকড়ে ঝাকানি শুরু করেছে। একবার শুরু হলে ৫ থেকে ১০ মিনিট চলতে থাকে। শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এই অদ্ভূত কান্ড দেখে ভীষন ভয় পেয়েছে। মৃগী রোগ কিনা বোঝার জন্য হাত পা ঝাকানোর সময় জুতা শুকিয়ে দেখা হয়েছে। খারাপ কোন কিছু আছর করেছে কিনা মসজিদের ইমামের পড়াপানি খাইয়ে দেখেছে। এরপরও কাজ না হওয়ায় বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে। রিতার বাবা মা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও সুরাহা পায়নি। মেয়েকে যে জ্বিনেই ধরেছে সে ধারনা পাকাপোক্ত হয়েছে। নিজ গ্রামের, ভিন গ্রামের পীর-ফকির, কবিরাজ সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছেন মেয়েকে নিয়ে। রিতার বয়স আঠারো চলছে। দুই বছর ধরে বিয়ে হয়েছে, তার অমতে। স্বামী বিদেশ থাকত, মাসখানেক ধরে দেশে এসেছে। জ্বিনে ধরা বউ নিয়ে তো আর সংসার চলেনা তাই নতুন করে পাত্রী দেখা হচ্ছে।
রিতার সাথে আমার পরিচয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে। অনেক পথ পাড়ী দিয়ে তার এই হাসপাতালে আসা। পানিপড়াসহ ওঝা ফকিরের লাঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে। তখনও সে কথা বলেনা এবং হাত পাগুলোকে অদ্ভূতভাবে ঝাকায়। রিতা কনভারসন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলো যার প্রচলিত নাম হিস্টিরিয়া। এক ধরনের মানসিক রোগ। সাইকোথেরাপী যেখানে চমতকার কাজ করে। রিতা একসপ্তাহের মধ্যেই সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলে। সে ছোটবেলা থেকেই নানুর বাসায় মানুষ। বাবার আর্থিক অবস্থা অত খারাপ না, সুযোগ সুবিধা বেশী বলে নানুর বাসায়ই থাকা হত। ক্লাস টেনে ওঠার পর এই বিয়ের প্রস্তাবটি আসে। ছেলে বিদেশ থাকে, অনেক পয়সা কামাই করে, টাউনে নিজেদের বাড়ী আছে। পাত্রপক্ষের এত আগ্রহ দেখে রিতার মামারা রাজী হয়ে যায়। রিতার মতামত কেউ জানার প্রয়োজন মনে করেনা। বিয়ের পর রিতা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলো যতটা আগ্রহ দেখিয়ে তাকে বিয়ে করিয়ে আনা হয়েছে বিয়ের পর তার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেইছোটখাট বিষয়ে তাকে কথা শোনানো হয়। বিয়ের পরপরই স্বামী বিদেশ চলে যায়। রিতার শ্বাশুড়ী তার স্বামীর সমা, নানান ছুতায় তাকে অপমান করেন। কাজকর্মে অদক্ষতার জন্য পদেপদে ভুল ধরা হয়। রিতা কোন কথা বললে তা আবার ব্যাঙ্গ করে তাকে শোনানো হয়। স্বামী ফোন করে শুধু তার পরিবারের লোকজনদের সাথেই কথা বলেন। রিতার অনুভূতির কোন মূল্য দেয়া হয়না। পড়াশুনা চালিয়ে না যাতে পারার দুঃখ আর এত আগ্রহের বিয়ের এই ফলাফল, বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হবার অভিজ্ঞতা রিতার ভিতরে ভিতরে তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি করেযার বহিঃপ্রকাশ শারীরিক এই লক্ষণের মাধ্যমে ঘটে, কথা বন্ধ হয়ে যায়। হিস্টিরিয়ার বা কনভার্সন ডিসঅর্ডারের মূল কারণটাই হলো মানসিক কোন দ্বন্দ্ব যা ব্যাক্তির মনে অসচেতনভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সাইকোথেরাপী মূলতঃ এই মানসিক দ্বন্দ্বটাই আবিস্কার করে। মানসিক চাপ কমে গেলে শারীরিক লক্ষণগুলো কমে আসে। যেমন সাইকোথেরাপীর কয়েকটি সেশনের পর রিতার শারীরিক লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে। রিতার কোন শারীরিক সমস্যা ছিলোনা, সমস্যাটা পুরোপুরি মানসিক কিন্তু রিতার মতো অনেকেই এরকম জ্বিন ভূতের আছর সংক্রান্ত ভুল ধারণার শিকার হয়। জ্বিন ভূতের আছর তাড়ানোর নামে চলে অপচিকিতসাতার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক রোগগুলোর বিচিত্র লক্ষণসমূহ। শুধুমাত্র কনভারশন ডিসঅর্ডারেই এত ধরনের লক্ষণ দেখা যায় আর সেগুলো এতই অদ্ভূত যে তা মানসিক রোগ হিসাবে সাধারণের বোঝা সত্যি দুরূহ। তাছাড়া আমাদের সমাজে মানসিক রোগ সম্পর্কে রয়েছে নেতিবাচক ধারনা। মানসিক রোগ মানেই মনে করাই পাগল। মানসিক রোগ সম্পর্কে রয়েছে নানা রকম কুসংস্কার। এই কুসংস্কার দূর করার জন্য চাই যথাযথ পদক্ষেপ। মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপুর্ণ উপায় হতে পারে পাঠ্যবইতে কিছু প্রচলিত মানসিক রোগের ধারণার অন্তর্ভূক্তি। প্রাথমিক শিক্ষায় শারীরিক রোগগুলোর মতো মানসিক রোগগুলোকেও পরিচয় করিয়ে দিলে মানুষ অনেক ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি পাবে।

বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

ভুল বোঝা নয় ভুল্ভাবে বোঝার কথা বলছি!!!

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই নানান ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনাগুলোকে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করি বা নিজেদের মতো করে বুঝে নেই। পরিস্থিতিগুলো হয়তো এমন হয় যে, আমাদের মনে হয় আমরা যা চিন্তা করছি তার বিকল্প কিছু হতেই পারেনা। আমি যা ভাবছি তাই ঠিক - আমাকে বোঝানোর দরকার নেই, এরকমই আমরা মনে করি। আপাতদৃষ্টিতে সঠিক বলে মনে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নয় এইরকম চিন্তার ধরনগুলোকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ' distorted cognition’ বা চিন্তনের বিচ্যুতি। জ্ঞানীয় বা চিন্তনের বিচ্যুতি সাধারণত আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করে এবং এগুলো স্বাভাবিক চিন্তারই অতিরিক্ত বা অযৌক্তিক বহিঃপ্রকাশ। যেমন, কেউ হয়তো পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করল, সে কারনে মনে করলো ‘আমি আসলে অপদার্থ, আমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা’।  বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও এখানে ব্যক্তি প্রথমতঃ নিজেকে একটি মার্কা মেরে দিলো যে আসলে সে অপদার্থ এবং ফলাফল খারাপ করার বিষয়টি সে সবক্ষেত্রে প্রয়গ করল যে তার দ্বারা কিছুই হবেনা। এ ধরনের চিন্তাগুলোই মানুষের জীবনের স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায়। যার ফলে মানুষ পদেপদে পিছিয়ে পড়ে। এ রকমই কিছু বিচ্যুত চিন্তা বা ভুলভাবে বোঝার ধরন মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলোঃ

১। হয় সব নাহলে না, হয় সাদা নয় কালোঃ এক্ষেত্রে ব্যক্তি যে কোন বিষয়বস্তু, ঘটনা অথবা অন্যদের সম্পর্কে মূল্যায়ন শুধুমাত্র দুইভাবে করে। যার ফলে প্রেক্ষাপটটির সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয় না। যেমনঃ অনেক শিক্ষার্থী মনে করে যদি তারা পরীক্ষায় প্রথম না হয় তাহলে তারা খারাপ ছাত্র, বা অন্যদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি ব্যক্তিটি ভালো না হয় তাহলে নিশ্চয়ই খারাপ।কিন্তু পরীক্ষায় প্রথম না হলেই যেমন কেউ খারাপ ছাত্র হয়ে যায়না তেমনি কেউ ভালো নয় মানেই যে সে খারাপ তাও সঠিক নয়। এ ধরনের বিচুতিতে ব্যাক্তি চিন্তার ক্ষেত্রে চরমপন্থি হয়।

২। তিলকে তাল করা বা ভাগ্য অনুমান করাঃ এক্ষেত্রে যে কোন ঘটনাকে বড়ো করে দেখা হয় ঘটনা সম্পর্কে নেতিবাচক ভবিষ্যতবাণী করা হয়। যেমন কেউ হয়তো কাউকে মনের কথা জানিয়ে সাড়া পেলোনা তখন সে মনে করলো ‘আমাকে আসলে কেউ ভালোবাসেনা। আমি সারাজীবনই কষ্ট পাবো, এরকম অপমানিত হবো।

৩। নিজের ভালো দিককে গুরুত্ব না দেয়াঃ ব্যক্তি তার ভালো গুণ, দক্ষতা, কাজ বা অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করেনা। এ ধরনের কথাগুলোই তার উদাহরণ ‘ইংলিশে  পেয়েছি আমি ভালো ছাত্র বলে যে তা না, সেদিন প্রশ্ন সহজ হয়েছিল’ বা ‘ রান্না ভালো করি তো কি হয়েছে এটা তো সবাই পারে’ ইত্যাদি।

৪। আবেগীয় পক্ষপাতিত্বঃ ব্যক্তি আবেগীয়ভাবে এমন কোন ধারণার বশবর্তী হয় যা কিনা সত্যি নয় অথবা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, অনেকেই অভিযোগ করেন যে ‘কোন কাজ করতে গেলেই মনে হয় আমি পারবনা। আমি আসলে কোন কাজের না’। অথচ কাজে নামিয়ে দিলে তারা তা ভালোভাবেই সম্পাদন করতে পারে।

৫।মার্কা লাগিয়ে নেয়া বা দেয়াঃ ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে বা অন্যদের সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট মার্কা এঁটে দেয়। যেমন, অযোগ্য, অপদার্থ, অলস, কুঁড়ে, বাচাল, অমিশুক ইত্যাদি।

৬। উপসংহারে পৌছে যাওয়াঃ যে কোন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে সেই বিষয়ের উপসংহারে পৌছানো। যেমন, ‘ আজকে যে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো তা আমার হাজবেন্ড ভুলেই গেছে। ও আসলে আমকে ভালোইবাসেনা’।

৭। নির্বাচিত বিষয়ই দেখাঃ ব্যক্তি শুধু সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয় যা তার মতামতের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ কিন্তু সমগ্র ঘটনাটি বিবেচনা করে না। যেমন, অংকে পাওয়াটাই প্রমাণ করে যে আমার যোগ্যতা কতটুকু। অংকই তো আসল বিষয়। আর তাতেই ভালো করি নাই’।

৮। অন্যেরা কি মনে করবে তা বুঝে নেওয়াঃ এক্ষেত্রে অন্যেরা কি মনে করেছে বা কি মনে করবে ব্যক্তি নিজেই ঠিক করে নেয়। যেমন, আমি যদি তার কাছে ধার চাই তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই আমাকে হ্যাংলা মনে করবে’। 

৯। অতিরিক্ত সাধারনীকরণঃ ব্যক্তি যে কোন একটি ঘটনাকে ধরে ফলাফলকে সবক্ষেত্রেই প্রয়োগ করে। যেমন, ‘ দিবা সেদিন মার্কেটে আমাকে দেখেও কথা বলেনি, ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে। সবাই আমাকে এড়িয়ে যেতে চায়। কেউ আমাকে পছন্দ করেনা।আমার কোথাও না যাওয়াই ভালো।টিচাররাও আমাকে পছন্দ করেনা। যেদিন পড়া পারিনা সেইদিনই ধরে’।

১০। নিজের উপর নেয়াঃ ব্যক্তি মনে করে সবাই শুধু তার সাথে খারাপ আচরণ করে বা যে কোন ঘটনার জন্যই নিজেকে দায়ী করে। যেমন, ‘বস যে মিটিংএ কথাগুলো বলছিলেন আসলে আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছিলেন।কাজটাতো আমার জন্যই ভালো করে শেষ হয়নি।আমাকে বোঝানোর জন্যই বলেছেন’।

১১। করা উচিত ছিল বা করতেই হবে এমন বিবৃতিঃ যে কোন বিষয়েই অনেক বেশি রিজিড থাকে। আমার ভালো করা উচিত বা আমাকে ভালো করতেই হবে – মতামতগুলো এই ধরনের হয়। যার ফলে অনেক বেশী চাপের মধ্যে থাকে এবং প্রত্যাশা পূরণ না হলে ভেঙ্গে পড়ে।

১২। সংকীর্ণভাবে দেখাঃ যে কোন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি শুধু খারাপ দিকগুলোই দেখে।যেমন, ‘আমার স্ত্রী কোন কাজই ঠিকমতো করতে পারেনা, না রান্না করতে পারে, না বাচ্চাদের যত্ন নিতে পারে’। 

১৩। দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোঃ ব্যক্তি তার যাবতীয় সমস্যার জন্য অন্যদেরকে দায়ী মনে করে এবং সে কারণে সেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে। যেমন, ‘তোমার কারণে আজকে আমার এই অবস্থা। সবকিছুর পেছনে তুমিই দায়ী’।

১৪। পরিবর্তনের দুরাশাঃ ব্যক্তি আশা করে অন্যেরা তার চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। তারা অন্যদের পরিবর্তন করতে চায় কারণ তাদের ভালো থাকার অনুভূতি অন্যদের উপর নির্ভরশীল।যেমন অনেক সময় আমরা আমাদের পছন্দের মানুষটিকে তার নিজস্বতাকে ভুলে গিয়ে নিজেদের মতো গড়েপিটে নিতে চাই। আর সেরকম না হলেই হয় মনোমালিন্য।

এই জাতীয় চিন্তনের বিচ্যুতিগুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যহত করে, আমাদের সম্পর্কগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।এরকম ভুলভাবে বোঝার পরিমাণ যদি বেশী হয় তাহলে তা মানসিক সমস্যা তৈরী করে। যেমনঃ বিষন্নতা, সামাজিক উদ্বেগ বা ভীতি প্রভৃতি। সুতরাং আমরা যদি নিজেদের চিন্তাভাবনার গতিপথগুলোকে যাচাই করে সংশোধিত করে নিতে পারি তাহলে আমাদের জীবন আরো সহজ ও সাবলীল হয়ে উঠবে।