সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

মানসিক রোগ বনাম জ্বিন ভূতের আছর



রিতা একমাস ধরে কথা বলেনা। সারাদিন বোবার মত তাকিয়ে থাকে। একেবারেই চুপ, তাও না হয় সহ্য করা যেত কিন্তু গত পনের দিন সে হাত পা কুকড়ে ঝাকানি শুরু করেছে। একবার শুরু হলে ৫ থেকে ১০ মিনিট চলতে থাকে। শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এই অদ্ভূত কান্ড দেখে ভীষন ভয় পেয়েছে। মৃগী রোগ কিনা বোঝার জন্য হাত পা ঝাকানোর সময় জুতা শুকিয়ে দেখা হয়েছে। খারাপ কোন কিছু আছর করেছে কিনা মসজিদের ইমামের পড়াপানি খাইয়ে দেখেছে। এরপরও কাজ না হওয়ায় বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে। রিতার বাবা মা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও সুরাহা পায়নি। মেয়েকে যে জ্বিনেই ধরেছে সে ধারনা পাকাপোক্ত হয়েছে। নিজ গ্রামের, ভিন গ্রামের পীর-ফকির, কবিরাজ সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছেন মেয়েকে নিয়ে। রিতার বয়স আঠারো চলছে। দুই বছর ধরে বিয়ে হয়েছে, তার অমতে। স্বামী বিদেশ থাকত, মাসখানেক ধরে দেশে এসেছে। জ্বিনে ধরা বউ নিয়ে তো আর সংসার চলেনা তাই নতুন করে পাত্রী দেখা হচ্ছে।
রিতার সাথে আমার পরিচয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে। অনেক পথ পাড়ী দিয়ে তার এই হাসপাতালে আসা। পানিপড়াসহ ওঝা ফকিরের লাঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে। তখনও সে কথা বলেনা এবং হাত পাগুলোকে অদ্ভূতভাবে ঝাকায়। রিতা কনভারসন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলো যার প্রচলিত নাম হিস্টিরিয়া। এক ধরনের মানসিক রোগ। সাইকোথেরাপী যেখানে চমতকার কাজ করে। রিতা একসপ্তাহের মধ্যেই সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলে। সে ছোটবেলা থেকেই নানুর বাসায় মানুষ। বাবার আর্থিক অবস্থা অত খারাপ না, সুযোগ সুবিধা বেশী বলে নানুর বাসায়ই থাকা হত। ক্লাস টেনে ওঠার পর এই বিয়ের প্রস্তাবটি আসে। ছেলে বিদেশ থাকে, অনেক পয়সা কামাই করে, টাউনে নিজেদের বাড়ী আছে। পাত্রপক্ষের এত আগ্রহ দেখে রিতার মামারা রাজী হয়ে যায়। রিতার মতামত কেউ জানার প্রয়োজন মনে করেনা। বিয়ের পর রিতা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করলো যতটা আগ্রহ দেখিয়ে তাকে বিয়ে করিয়ে আনা হয়েছে বিয়ের পর তার বিন্দুমাত্র লক্ষণ নেইছোটখাট বিষয়ে তাকে কথা শোনানো হয়। বিয়ের পরপরই স্বামী বিদেশ চলে যায়। রিতার শ্বাশুড়ী তার স্বামীর সমা, নানান ছুতায় তাকে অপমান করেন। কাজকর্মে অদক্ষতার জন্য পদেপদে ভুল ধরা হয়। রিতা কোন কথা বললে তা আবার ব্যাঙ্গ করে তাকে শোনানো হয়। স্বামী ফোন করে শুধু তার পরিবারের লোকজনদের সাথেই কথা বলেন। রিতার অনুভূতির কোন মূল্য দেয়া হয়না। পড়াশুনা চালিয়ে না যাতে পারার দুঃখ আর এত আগ্রহের বিয়ের এই ফলাফল, বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হবার অভিজ্ঞতা রিতার ভিতরে ভিতরে তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি করেযার বহিঃপ্রকাশ শারীরিক এই লক্ষণের মাধ্যমে ঘটে, কথা বন্ধ হয়ে যায়। হিস্টিরিয়ার বা কনভার্সন ডিসঅর্ডারের মূল কারণটাই হলো মানসিক কোন দ্বন্দ্ব যা ব্যাক্তির মনে অসচেতনভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সাইকোথেরাপী মূলতঃ এই মানসিক দ্বন্দ্বটাই আবিস্কার করে। মানসিক চাপ কমে গেলে শারীরিক লক্ষণগুলো কমে আসে। যেমন সাইকোথেরাপীর কয়েকটি সেশনের পর রিতার শারীরিক লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে আসে। রিতার কোন শারীরিক সমস্যা ছিলোনা, সমস্যাটা পুরোপুরি মানসিক কিন্তু রিতার মতো অনেকেই এরকম জ্বিন ভূতের আছর সংক্রান্ত ভুল ধারণার শিকার হয়। জ্বিন ভূতের আছর তাড়ানোর নামে চলে অপচিকিতসাতার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক রোগগুলোর বিচিত্র লক্ষণসমূহ। শুধুমাত্র কনভারশন ডিসঅর্ডারেই এত ধরনের লক্ষণ দেখা যায় আর সেগুলো এতই অদ্ভূত যে তা মানসিক রোগ হিসাবে সাধারণের বোঝা সত্যি দুরূহ। তাছাড়া আমাদের সমাজে মানসিক রোগ সম্পর্কে রয়েছে নেতিবাচক ধারনা। মানসিক রোগ মানেই মনে করাই পাগল। মানসিক রোগ সম্পর্কে রয়েছে নানা রকম কুসংস্কার। এই কুসংস্কার দূর করার জন্য চাই যথাযথ পদক্ষেপ। মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপুর্ণ উপায় হতে পারে পাঠ্যবইতে কিছু প্রচলিত মানসিক রোগের ধারণার অন্তর্ভূক্তি। প্রাথমিক শিক্ষায় শারীরিক রোগগুলোর মতো মানসিক রোগগুলোকেও পরিচয় করিয়ে দিলে মানুষ অনেক ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি পাবে।

৭টি মন্তব্য:

  1. উত্তরগুলি
    1. লেখাগুলোর উদ্দেশ্য যেন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কীত সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। যদি আপনি শেয়ার করার মাধ্যমে সেই সুযোগ বাড়ে তাহলে কেন নয়? আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ!

      মুছুন
  2. 100 correct ...
    আমি এই বিষয়ে আপনার কাছে হেল্প চাই.
    আমার অনেক দিনের আশা আমি নিজে জ্বীন সারাব এই বিষয়ে আপনি একটু্ত হেল্প করতে পারেন কি ভাবে আমি জ্বীন সারাব?

    উত্তরমুছুন
  3. please contact me .. 01781163890

    100 correct ...
    আমি এই বিষয়ে আপনার কাছে হেল্প চাই.
    আমার অনেক দিনের আশা আমি নিজে জ্বীন সারাব এই বিষয়ে আপনি একটু্ত হেল্প করতে পারেন কি ভাবে আমি জ্বীন সারাব?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. রুবেল আমি আপনার প্রশ্নটি বুঝতে পারিনি। আমার এই লেখাটিতে বলা হয়েছে যে অনেক সময় মানসিক সমস্যাকে জ্বীনের আছর বলে মনে করা হয়, জ্বীন সারানোর কথা বলা হয়নি। আপনি কি জানতে চেয়েছেন আরেকটু বুঝিয়ে বললে ভালো হয়। ভালো থাকবেন।

      মুছুন
  4. আসলে আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের সমাজে এই ভূল ধারণাটা অনেক বেশী.
    যেমন সোনা যায় কাওকে ভূতে ধরেছে বা মানসিক রোগটাকে তারা জ্বীন বা ভূতে ধরেছে মনে করে। এখন আমি চাচ্ছি কোন মানসিক রোগিকে আমি কি ভাবে ঠিক করতে পারি? আমার একটি পোস্ট দেখুন। https://www.facebook.com/photo.php?fbid=361561887309132&set=a.343174685814519.1073741828.343100112488643&type=1&theater

    আর আমার একটি পেইজ আছে https://www.facebook.com/ScienceBangla আশা করি এই পেইজটি থেকে কিছু জানতে পারবেন।

    আর আমার ওয়েবসাইট: www.erubel.com

    উত্তরমুছুন