শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৪

প্যারিস ঘুরে এলাম (শেষ পর্ব)



হোস্টেলে এসে ফ্রেশ হতে হতে বাইরে তখন আঁধার নেমে গেছে। অপরিচিত শহরে সন্ধ্যার পর বাইরে বের না হওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু ঘুমিয়ে পরবার জন্যও তা আবার অনেক তাড়াতাড়ি। স্কাইপে বাসায় কথা বলে নিচে নামলাম। ইচ্ছা ছিল একটু সোশ্যালাইজ হওয়ার। কিন্তু দেখলাম সবাই নিজের ভেতরেই ডুবে আছে। এগমন্ডে যেহেতু আমরা নিজেরাই সবাই ছিলাম। তখন বিষয়টা খেয়াল করিনি। রিশিপশনিস্টকেও দেখলাম খুব ব্যস্ত। প্রায় আমার বয়সী আরেকটি মেয়ে চেক ইন করছে। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম যদি মেয়েটি আমার দিকে তাকায়, যদি একটু কথা বলা যায়। সেরকম কিছু হলনা। মেয়েটি তার জিনিসপত্র বুঝে নিয়ে উপরে উঠে গেল। আমি রিসিপশনিস্টের দিকে এগিয়ে গেলাম।
“আমি দুইদিন প্যারিসে আছি, আইফেল টাওয়ার আর লুভর মিউজিয়াম দেখার ইচ্ছে আছে, কিভাবে যাব, আর কোথায় কোথায় যেতে পারি আপনি কি একটু বলে দিতে পারবেন?” রিসিপশনিস্ট সাথে সাথে ম্যাপ নিয়ে প্যারিসের দর্শনীয় স্থানগুলো দাগ দিয়ে দেখাতে লাগল। কিভাবে যাব তাও বলে দিচ্ছিল কিন্তু মাথায় কিছু ঢুকেছে বলে মনে হয়নি। চার পাঁচটা টুরিস্ট স্পট দেখানোর পর বলল “ এগুলো কালকে দেখে আসেন, আমি কালকে রাতেও এখানে আছি, এরপরে না হয় আবার কথা বলা যাবে”। আমিতো একদিনে এতগুলো জায়গাতে ঘোরা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলাম, রিসিপশনিস্টের কথা তা নির্ভর করছে আমি কতখানি সময় নিয়ে ঘুরতে চাই তার উপর!

সকালবেলা আলসেমিতে বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছিলনা। কিন্তু ব্রেকফাস্টের সময় সকাল দশটা পর্যন্ত। ব্রাজিলিয়ান রুমমেট একসাথে নাস্তার জন্য ডাকল। আমি আসছি বলে তাকে যেতে বললাম। সকালের সবকাজ সেরে একাবারে প্রস্তুত হয়ে নিচে নামতে নামতে আমার রুমমেট নাস্তা সেরে চলে এসেছে। আমি বিব্রতভঙ্গীতে হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হলামমাথায় তখনো সারাদিন কিভাবে কাটাব তা নিয়ে চাপ কাজ করছিলো। আগের দিনের অভিজ্ঞতাই আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করছিলো, এখানে ডিরেকশন জানতে চাওয়া কঠিন হবে। অথচ আমার প্রতিনিয়তই তা দরকার পড়বে। নাস্তা করতে করতেই দেখি একজন ভদ্রলোক রিসিপশনে ম্যাপ দেখিয়ে কিছু জানতে চাইছেন। ভদলোককে দেখে এশিয়ান মনে হলো। আমি দ্রুত নাস্তা শেষ করে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষনে তিনি দরজার বাইরে।  একটু জোরে পা চালিয়ে কাছে পৌছে গেলাম “ হাই, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, আপনি কি এখন কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন?” “হ্যাঁ, লুভর মিউজিয়ামে” তিনি বললেন। “আমি এখানে একা বেড়াতে এসেছি, এখানে তো কেউ তেমন ইংরেজি বলেনা তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। আমিও লুভর মিউজিয়াম দেখতে যাব। আমি আপনার সাথে আসি?” অনুরোধটি করার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি জানতামনা আমি এই জাতীয় হাস্যকর অনুরোধ করতে পারি! আমার যে সোশ্যাল এংজাইটি আছে শুধু সে কারণে নয়, অনেকেই বলে আমি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পছন্দ করি, সেটাও একটা বিশাল কারণ। ভদ্রলোককে একটু দ্বিধান্বিত মনে হলো, তারপরও সঙ্গে নিলেন। জানতে চাইলেন আমি সরাসরি বাংলাদেশ থেকেই এসেছি কিনা। সেই সুযোগেই আমি আমার সাইকোলজিস্ট পরিচয়টা দিয়ে দিলাম, আমস্টারডাম থেকে ট্রেনিং শেষ করে এখানে এসেছি বললাম, তার দামি জিনিসপত্র নিয়ে যে আমি পালাবনা সে বিষয়ে আশ্বস্ত করার জন্য! ভদ্রলোক ইন্ডিয়ান, কর্মসূত্রে জার্মানী এসেছিলেন, সেখান থেকে উইকেন্ডে বেড়াতে প্যারিস এসেছেন। সেদিন বিকেলেই পাঁচটার ট্রেনে আবার জার্মানী চলে যাবেন আমি তখন অনেকটাই রিলাক্সড। বাস স্টপ, বাস, কোথায় নামব তা নিয়ে আর চিন্তা করতে হচ্ছেনা। উনি আগেরদিনও  ঘোরাঘুরি করেছেন, তাই কিছুটা অভিজ্ঞ মনে হলো। উনার পরামর্শ অনুযায়ী বাসের পাস করে নিলাম, যার ফলে যাতায়াত খরচ অনেক কমে গিয়েছিল।

ভদ্রলোককে আইফেল টাওয়ার, মোনালিসা সম্পর্কে বেশ অবসেসড মনে হলো। আগ্রহ আমারও আছে, সেকারণেই প্যারিস আসা, কিন্তু উনার কথা শুনে মনে হলো ঠিক অতটা হয়তো আমার নেই। লুভর মিউজিয়ামে পৌছানোর পর উনার প্রথম কথা হলো “আগে মোনালিসা দেখে নেই”! পুরো লুভর মিউজিয়ামটা দেখার মতো করে দেখতে গেলে মাসখানেক লেগে যাওয়ার কথা। আমরা শুধু মোনালিসার অনুসন্ধান করতে করতে অন্যান্য পেইন্টিং গুলো দেখে গেলাম। আমার কাছে পেইন্টিং হচ্ছে কবিতার মতো, কবিতা যেমন উপন্যাসের মতো পড়ে শেষ করে ফেলা যায়না সেরকম। আমাদের সাথে কোন গাইড নেই, লেখাগুলো সব ফ্রেঞ্চ ভাষায়, তাই পেইন্টিং গুলো শুধু দেখতে কেমন তাই দেখলাম, মর্মার্থ বুঝলাম না! গাঁগাঁর কিছু ত্রিমাত্রিক ছবি লেখলাম। একটা প্লেটের উপর একজন পুরুষের কাটা মাথা রেখে দেয়া! ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায় কাটা মাথা ধীরে ধীরে চোখ খুলছে। এই জাতীয় ছবি সেই রুমে অনেকগুলো। ঘরের মাঝখানে বিশাল একটি পেইন্টিং-এ একটি মেয়ে মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ সময় দিয়ে দেখলে দেখা যায় তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম একটি পাখি উড়তে উড়তে ক্যানভাস থেকে বের হয়ে গেল! ছবিটির বিপরীত দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে প্রজেক্টর লাগানো। প্রজেক্টর দেখে বিস্ময়ভাব দূর হয়ে গেল। এই ছবিগুলো এতো বিখ্যাত কেন জানতে ইচ্ছা করল, কিন্তু বলে দেয়ার মতো কেউ ছিলনা। মোনালিসাকে খুঁজে পেতে সময় লাগছিল, আমার সাথের ভদ্রলোক অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন। যেহেতু উনার অনুমতি না নিয়েই উনার সম্পর্কে লিখছি, তাই একটা নাম ধরে নেই, ধরে নেই রাহুল (হিন্দী ছবির নায়কদের সবচেয়ে কমন নাম! ভদলোকের আসল নামও বলিউডের নায়কের নাম, তাই বিষয়টা খুব বেশী সিনেমাটিক হলনা) মোনালিসা খুঁজতে খুঁজতে মজার পরিস্থিতি তৈরি হলো। জিজ্ঞেস করে করে যাওয়া সত্ত্বেও এমন জায়গায় পৌছালাম যে মানুষজন দেখতে পাচ্ছিলাম না। মিউজিয়ামটাও এমন কোন দরজার পেছনে কি অনুমান করা কঠিন। তো রাহুল কাউকে না পেয়ে এক দরজার নব ধরে ধাক্কা দিলেন। সাথে সাথেই দরজা খুলে মিউজিয়াম অথরিটির এক ভদ্রলোক বের হয়ে এলেন। রাহুল তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন “we are looking for Monalisa”. “She is not here” ভদ্রলোক তড়িৎ জবাব দিলেনপেছন থেকে আমি হেসে উঠলাম। ফ্রেঞ্চদের সেন্স অব হিউমারের সাথে প্রথম পরিচয়। তিনি আমাদের দেখিয়ে দিলেন যাদুঘরের কোন অংশে আমরা মোনালিসাকে দেখতে পাব। দেখলাম শুধু আমরাই নই অন্যেরাও মোনালিসা দেখতেই আগ্রহী। যার ফলে যাদুঘরের অন্যান্য অংশে মানুষজন তেমন দেখা না গেলেও মোনালিসা দেখার জন্য ভীড় ঠেলে এগুতে হলো।  মোনালিসা দেখে রাহুল সাহেবের মতো উচ্ছসিত না হলেও কিছুটা অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছিল যে আমি এখন প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে মোনালিসার সামনে দাঁড়িয়ে। পুরো একটি বিশাল দেওয়াল জুড়ে ছোট্ট মোনালিসাটি বসানো। তারপর ফোটসেশন শেষ করে অন্যান্য পেইন্টিংগুলোর দিকে মনযোগ দিলাম। মোনালিসার বিপরীত দিকের পুরো দেয়াল জুড়েই বিশাল এক পেইন্টিং! আয়তনের দিক থেকে বিখ্যাত হওয়া গেলে এটারই সবচেয়ে বিখ্যাত হওয়ার কথা। এতো বিশাল পেইন্টিং লিওনার্দো কিভাবে আঁকলেন তা চিন্তা করেই বিস্ময় জাগে! এরপরে আরো বেশ কিছু পেইন্টিং দেখা হলো, অবশ্যই বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম কিন্তু অজ্ঞতার কারণে তার মূল্যায়ন ভালো করে করতে পারলামনা!

লুভর থেকে বের হয়ে আমরা হাঁটতে হাঁটতে নটরডেমের দিকে রওয়ানা দিলাম। সেখানে ৮০০ বছরের পুরানো গীর্জা অপেক্ষা করছে। গীর্জায় পৌছাতে পৌছাতে পথভুল করে করে প্যারিস শহরের অনেকখানি দেখা হয়ে গেল। গীর্জা বাহির থেকে দেখেও আমরা মুগ্ধ! পুরো প্যারিস শহরটাই যাদুঘরের মতো। প্রতিটি বিল্ডিং-এই এতো সুক্ষ্ম কারুকাজ যে মনে বিস্ময় জাগিয়ে তোলে, কিভাবে সম্ভব! কিন্তু গীর্জার বাইরে লম্বা লাইন থাকায় আমরা আর ভেতরে ঢুকলাম না। সেখান থেকে আবার আইফেল টাওয়ারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, হাঁটতে হাঁটতেই। দূর থেকে টাওয়ারের মাথা দেখে দেখে সেই দিকে হাঁটতে লাগলাম। তখন প্রায় ভর দুপুর। সাথে কিছু শুকনো খাবার ছিলো, তাই খাওয়া হয়েছে। তারপরও কিছুটা ক্লান্ত। কিন্তু বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও বাসের সন্ধান পাওয়া গেলনা। তাই হন্টনই একমাত্র উপায় ছিলোপ্যারিসের সেইন নদীর ধার ধরে হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর মজার একটা বিষয় খেয়াল করলাম। নদীর ধারের রেলিং ধরে হাজার হাজার তালা ঝুলছে! প্যারিসে যারা বেড়াতে আসে তারা স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তালা ঝুলিয়ে রেখে যায়। সেখানে আবার বিভিন্ন রকম মেসেজ লিখা আছে। এভাবেই ন্যাশনাল এসেম্বলি সহ বিভিন্ন যাদুঘর বাইরে থেকে দেখতে দেখতে আইফেল টাওয়ারে পৌছে গেলাম।
ততক্ষনে প্রায় তিনটা বাজে। একটা বেঞ্চে বসলাম পা দুটোকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। এর মাঝেই রাহুল সাহেবের মনে পড়ল তার ব্যাগে ওয়াইন আছে। গতকাল কিনেছিলেন, শেষ করতে পারেন নি, অর্ধেক অবশিষ্ট আছে। বের করে এক চুমক খেয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন “আপনি খাবেন?” দেশে যদি কখনো এরকম পরিস্থিতি হতো, আমাকে কেউ মদ খাওয়ার অফার করত, আমি নিশ্চয়ই ফিট হয়ে পড়ে যেতাম। আমার ধর্মীয় মুল্যবোধ বেশ শক্তিশালী, তাই কৌতুহল কম। মনে হতো এর চেয়ে বদমাশ লোক আর পৃথিবিতে নেই! কিন্তু তখন সেরকম কিছু মনে হলনা। কারণ এর আগে আমাদের ট্রেনিং-এ ডিনারে ব্রেডের মতো ওয়াইনও রেগুলার আইটেম ছিলো। সাইকোলজিস্টের সংখ্যায় যেহেতু মেয়েরা বেশী, তাই মেয়েদের অনুরোধই বেশী প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছে। তাই এখানেও সংক্ষেপে বললাম “না”। তখন তিনি বললেন “আরে নেন, না হলে আমি কিন্তু পুরোটা খেয়ে ফেলব”। আমি হেসে ফেললাম, বললাম “নির্দিধায়”।

ততক্ষনে উনার যাবার সময় হয়ে গেছে। আমাকে বারবার করে বললেন আমি যেন ভালো করে সময় নিয়ে আইফেল টাওয়ার দেখি। সন্ধ্যার পরে যে টাওয়ারটি দেখতে পুরাই অন্যরকম লাগে তাও বললেন, কোথায় বসে দেখব, কিভাবে হোস্টেলে ফিরব তাও দেখিয়ে দিলেন! তারপর বিদায়বেলা হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেক করার জন্য। আমি বললাম “আপনি কি খুব বেশী বিব্রতবোধ করবেন আমি যদি হ্যান্ডশেক না করি? আমার অভ্যাস নাই তো” তিনি বেশ সহজভাবেই বাড়ানো হাত টেনে নিলেন, বললেন “ না না ঠিক আছে, কমফোর্টেবল না হলে দরকার নেই”। তারপর চলে গেলেন।

যেখান থেকে আইফেল টাওয়ার সবচেয়ে ভালো দেখা যায় আমি সেখানে গিয়ে একটি বেঞ্চে বসলাম। পাশে ১৪ বা ১৫ বছরের গোলাপী একটি মেয়ে বসে আছে। তার হাতে একটি কাগজ যেখানে চার কোনায় চারটি লাভ চিহ্ন আঁকা। মেয়েটি গোলাপী রঙের নেইলপলিশ দিয়ে রঙ করছিল। তারপর মোবাইল দিয়ে তার ছবি তুলছিল। আমি আইফেল টাওয়ার দেখা বাদ দিয়ে তার কর্মকান্ড দেখতে লাগলাম। সে একই প্রক্রিয়ার আবার পুনরাবৃত্তি ঘটাল। ছবিটা ভালো করে তোলার চেষ্টা করছিল। আমার কৌতুহলী চোখ দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আমি হাসি ফিরিয়ে দিলাম। তারপর টুকটাক কথা বলা শুরু হলো। মেয়েটি ইয়েস নো ছাড়া আর কোন ইংলিশ জানেনা আর আমি ফ্রেঞ্চ সেটুকুও জানিনা। তারপরও দুজনের ভেতর ভাব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আমরা দুজন মিলে বেড়াতে গেলাম। আইফেল টাওয়ার, তার সামনের মেলা, নদীর ধারের বেড়নোর অংশটুকু ঘুরে বেড়ালাম। মেয়েটির সাথে প্রায় তিন ঘন্টা ছিলাম। এর মাঝে সেও অনেক কিছু বলেছে আমি বুঝতে পারিনি, আবার আমিও চেষ্টা করেছিলাম মনে হয়নি সে বুঝেছে। ইশারা ইঙ্গিতটুকুই ছিল ভরসা। তারপর সন্ধ্যায় আইফেল টাওয়ারের বাতিগুলো জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হোস্টেলে ফেরার উদ্যোগ নিলাম। সেই মেয়েটি আমাকে পথ দেখিয়ে মেট্রোতে নিয়ে গেল। এখান থেকেই তার পথ আর আমার পথ ভিন্ন। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে, বিদায় নেয়ার সময় কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রইলাম, আর দেখা হবেনা।  যে নম্বরের ট্রেনে উঠার কথা তাতে উঠে পড়লাম, তারপরও আবার নিশ্চিত হবার জন্য একজনকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন যে এই ট্রেনই যাবে কিন্তু আমাকে বিপরীত রুট থেকে উঠতে হবে। তারমানে তখন আমি গন্তব্যস্থল থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছি! তাড়াতাড়ি পরের স্টপেজেই নেমে পড়লাম। মেট্রোর গোলকধাঁধায় পথ হারানো অস্বাভাবিক
নয়। অপরদিক থেকে আবার ট্রেনে উঠে গন্তব্যস্থলে পৌছালাম। তারপর সেখান থেকে প্যারিস শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষকে জিজ্ঞেস করতে করতে হোস্টেলে পৌছালাম!

আমি এরপরের দিনও প্যারিসেই কাটিয়েছি। সেদিন সারাদিন একাই ঘুরে বেড়িয়েছি। সেদিনও অনেক নতুন অভিজ্ঞতা ছিল কিন্তু অলসতার কারণে আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা। লেখাটা শুরু করেছিলাম নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের কথা দিয়ে। আমাকে দিয়ে যে কিছু হবে না তা আমি আগের মতো আর বিশ্বাস করিনা। আমার রিসার্চের কাজ নিয়ে কিছুটা স্টাক হয়ে আছি, ঘুরেফিরেই মাথায় চলে আসে আমাকে দিয়ে হবেনা। কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক বেশী বিশ্বাস করতে পারি যে আমি পারব!

এখান থেকে আমার বন্ধুদের শুধু এটুকুই বলতে চাই যারা পারবনা মনে করে কোন লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান, তারা ফিরে আসার পথ ভুলে গিয়ে কাজটিতেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেখবেন নিজের সম্পর্কে এমন অনেক নতুন ধারণা পাবেন যা আপনি নিজেই জানতেন না।

৩টি মন্তব্য:

  1. খুব ভাল লাগলো পড়ে। আরও অনেক কিছু করবে জীবনে তার শুভকামনা রইল।

    উত্তরমুছুন
  2. অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম!!! আপনার মন্তব্য দেখে সত্যি অনেক অনেক ভালো লাগ্লো। আশাকরি আপনি ভালো আছেন এবং যেন তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।

    উত্তরমুছুন
  3. exchanging xperiences makes people about to be perfect.......ample thanks....

    উত্তরমুছুন